বুগেই নামক ফরাসি বিস্কুট নিয়ে নিজ বাসগৃহে অদ্ভুত এক পরীক্ষা চালান ফ্রান্সের লুই লেকলার্ক কমতে দ্য ব্যুফন। হাতে বুগেই ধরে বৈঠকখানার দরজায় এসে দাঁড়ান ব্যুফন, তারপর কাঁধের উপর দিয়ে সেটি ছুঁড়ে মারেন পেছন দিকে, বৈঠকখানার ভেতরে। দরজা থেকে সরে এসে বুগেই খুঁজতে থাকেন তিনি, পাবার পর দেখে নেন কোথায় পড়েছিল তা। আয়তকার ফালিফালি তক্তা গায়েগায়ে ঠেকিয়ে বৈঠকখানার মেঝে মোড়ানো, তাদের পারস্পরিক সংযোগস্থলে হালকা চিড়। খাতায় টালিচিহ্নের সাহায্যে লিখে রাখেন ব্যুফন: কত বার তিনি বুগেই ছুঁড়লেন আর তাদের মাধ্যে কত বার বুগেইটি চিড়ের উপর পড়ল।
বেশ কিছুক্ষণ পরপর টালি যোগ করে যথাযথ সংখ্যাগুলো লিখে রাখছেন, সাড়ে তিন ঘন্টা পর নিচের টেবিলটি তৈরি হলো:
টেবিলের দিকে তাকিয়ে খানিকক্ষণ কী ভাবেন ব্যুফন, তারপর ডানপাশে আরও দুটি কলাম যোগ করে সেখানে কিছু ভাগের কাজ করেন:
সর্ব ডানের কলাম দেখে ভূত দেখার মতোই চমকে উঠেন ব্যুফন, π = ৩.১৪১৫৯২…! ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী লাঠিবিস্কুট
বুগেই আর কাঠের তক্তার সরলরৈখিক চিড়ের সাথে যুগযুগান্তরের রহস্যময় সংখ্যা π-এর কী সম্পর্ক থাকতে পারে!
বুগেই আর কাঠের তক্তার সরলরৈখিক চিড়ের সাথে যুগযুগান্তরের রহস্যময় সংখ্যা π-এর কী সম্পর্ক থাকতে পারে!
বিভিন্ন আকারের বুগেই নিয়ে পরীক্ষাটি করেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে আমরা বলতে পারি, তক্তার প্রস্থের (d) তুলনায় বুগেই-এর দৈর্ঘ্য (l) যত ছোট হবে, তত কমসংখ্যকবার এটি চিড়ের উপর পড়বে, অর্থাৎ সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ এটি কোনো একটি তক্তার মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে
ব্যুফন বিস্ময়ে লক্ষ করেন যে, এই কমসংখ্যকবারটিও সুনির্দিষ্ট অনুপাতেই কমছে, ফলে l/d এবং n/N ও π-এর সম্পর্কটি থেকেই যাচ্ছে, এবং সম্পর্কটি নিম্নরূপ:
l ও d আমাদের সহজেই মেপে নিতে পারি, আর n ও N পরীক্ষার সময় লিখে রাখলেই হলো। সুতরাং এ পরীক্ষা থেকে সবসময় আমরা π-এর মান নির্ণয় করতে পারি।
ব্যুফনের প্রথম পরীক্ষায় বুগেইয়ের দৈর্ঘ্য ছিল তক্তার প্রস্থের অর্ধেক, অর্থাৎ l = d/2
=> d = 2l
এক্ষেত্রে (1) থেকে পাই,
ব্যুফনের প্রথম পরীক্ষায় বুগেইয়ের দৈর্ঘ্য ছিল তক্তার প্রস্থের অর্ধেক, অর্থাৎ l = d/2
=> d = 2l
এক্ষেত্রে (1) থেকে পাই,
, যা ব্যুফনের টেবিলের ডান কলামের সাথে মিলে যায়।
ব্যুফনের চমকপ্রদ পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন গণিতবিদগণ, বুগেইয়ের পরিবর্তে সূঁই নিয়ে, সূঁই রেখে বাকানো আংটি নিয়ে, আয়তাকার তক্তা বাদ দিয়ে কাগজে সমান্তরাল সরলরেখা টেনে, রেখাগুলোকে প্যাঁচিয়ে বক্ররেখা বানিয়ে, বিভিন্ন ধরণের জ্যামিতিক ক্ষেত্রে নানান জিনিস ছুঁড়ে দিয়ে দিয়ে—সুদৃঢ় হয় জ্যামিতিক সম্ভাব্যতার (Geometric Probability) ভিত্তি।
কিন্তু শুধু π-এর মান নিয়ে বসে থাকেন না গণিতবিদগণ। বিপরীতদিক দিয়েও অগ্রসর হন তারা: π, n, N, l-এসব থেকে বের করেন তক্তার প্রস্থ d, প্রস্থ থেকে নির্দিষ্ট সমান্তরাল রেখাংশের মধ্যবর্তী আবদ্ধ ক্ষেত্রফল A। এভাবেই এক সময় তাঁরা আবিষ্কার করেন,
কোনো একটি আবদ্ধ ক্ষেত্রে যদি এলোপাতাড়িভাবে প্রথমে একটি বক্ররেখা টানা হয়, তারপর ঐ ক্ষেত্রে এলোপাতাড়িভাবে আরেকটি বক্ররেখা টানা হয়, তাহলে দ্বিতীয় বক্ররেখাটি অনেক জায়গা দিয়ে প্রথমটিকে অতিক্রম করে যাবে এবং তাদের মধ্যে নিচের সম্পর্কটি পর্যবেক্ষণ করা যাবে:
কোনো একটি আবদ্ধ ক্ষেত্রে যদি এলোপাতাড়িভাবে প্রথমে একটি বক্ররেখা টানা হয়, তারপর ঐ ক্ষেত্রে এলোপাতাড়িভাবে আরেকটি বক্ররেখা টানা হয়, তাহলে দ্বিতীয় বক্ররেখাটি অনেক জায়গা দিয়ে প্রথমটিকে অতিক্রম করে যাবে এবং তাদের মধ্যে নিচের সম্পর্কটি পর্যবেক্ষণ করা যাবে:
যেখানে l1 প্রথম বক্ররেখার দৈর্ঘ্য, l2 দ্বিতীয় বক্ররেখার দৈর্ঘ্য, n বক্ররেখাদ্বয় যত বার পরস্পরকে ছেদ করেছে তার সংখ্যা এবং A হচ্ছে সেই আবদ্ধ ক্ষেত্রফল যেখানে এলোপাতাড়িভাবে রেখা দুটি আঁকা হয়েছে।
ganitpathsala
ganitpathsala