PK

Science

 প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান সাম্রাজ্যে প্রচুর বিজ্ঞানীর দেখা পাওয়া যায় । কিন্তু তারপর হঠাৎ করে সবাই হারিয়ে গেলেন !!!


প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানীদের কথা ধরুন। ডেমোক্রিটাস (খ্রিষ্ট পূর্ব ৪৬০-৩৭০) প্রথম পরমানূর আইডিয়া দিয়েছিলেন। থিওফ্রাস্টাস (খৃষ্ট পূর্ব ৩৭১-২৮৭) ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক । হিপোক্রেটাস (খৃষ্ট পূর্ব ৪৬০-৩৭০) চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক । পিথাগোরাস (খ্রি পূ ৫৭০-৪৯৫),আর্কিমিডিস (খৃ পূ ২৮৭-২১২), টলেমি (১০০-১৭০) দের জ্যামিতি আমরা এখনো আকাই। হিপ্পারকাস, এরিস্টেটল, প্লিনি (২৩-৭৯) --ইত্যাদির কথা বলা যায় এই সময়ে ।


এই একঝাক বিজ্ঞানীদের দীর্ঘকাল পরে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ( ১৪৫২-১৫১৯) আগে আর কোনো

বিজ্ঞানীর কথা পাইনা কেন আমরা? মাঝের সময়টায় কি হইছিল ? কুফা লাগছিল ওদের ওখানে?


জানতে হলে একটু ইতিহাসের টাইমলাইনটা ফলো করতে হবে।


রোমান রাজা কনস্টানটাইন ৩৩০ সালের দিকে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করলেন। খৃষ্ট ধর্ম কে রাষ্টধর্ম বানালেন। রাজ্যের পলিটিক্স,ফিলসফি, আইডিওলজি সব খৃষ্টান ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গেল।


যেহেতু, খৃষ্টান ধর্মে বলা হয়েছে, সকল জ্ঞানের উৎস বাইবেল, তাই বিজ্ঞান বা অন্যান্য জ্ঞানের কাজ ফুরিয়ে গেল। ৫২৯ সালে সেই সময়কার সবচেয়ে বড় স্কুল, প্লেটোর প্রতিষ্ঠা করা 'এ্যাকাডেমি', বন্ধ করে দেওয়া হল। স্বাধীন জ্ঞান চর্চা আর রইল না। পরবর্তি ১০০০ বছর ইউরোপে আর নতুন কিছুই আবিষ্কার হল না। এই সময়টাকে বলা হয় ইউরোপের অন্ধকার যুগ।


এক হাজার বছর পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রেনেসা শুরু হয়। ধর্মীয়ভাবেও বিভিন্ন সংস্কারবাদী আন্দোলন শুরু হয়। ১৫৩৪ সালে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম হেনরি মূল ইটালির ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের দেশে চার্চ অফ ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করলেন। খৃষ্টান ধর্মের গোড়ামির সংস্কারের দাবিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রিফর্মিস্ট আন্দোলন গড়ে উঠল। মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) এবং অন্যরা বলা শুরু করেন, বাইবেল আক্ষরিকভাবে মানার দরকার নেই। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম বাদ দিয়ে তারা প্রটেস্টান্ট নামে নতুন গ্রুপ খুললেন। এই ধর্মে বিজ্ঞান চর্চায় কোনো বাধা নেই।


বাইবেলের সাথে সাংঘর্ষিক কথা বললেও কেউ তেমন মাইন্ড করেনা। এই কারনে রেনেসা যুগে ইউরোপে প্রচুর বিজ্ঞানী পাওয়া যায়। রেনেসা পূর্ব ইউরোপে সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ প্রচারের জন্য জিওর্দানো ব্রুনো কে প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিন্তু রেনেসার পরে গ্যালিলিও, ক্রিশিয়ান হয়গান, টাইকো ব্রাহেরা নির্বিঘ্নে একই কথা প্রচার করতে পেরেছিলেন।


রেনেসা শব্দের অর্থ পুনর্জাগরন। প্রাচীণ গ্রীক রোমান শিল্প এবং বিজ্ঞান কে তারা পুনর্জাগরন করেছিলেন। এবং তাদের কাজগুলকে আরো এক ধাপ করে এগিয়ে নিয়েছিলেন। আধুনিক শিল্প বিপ্লব এবং বুদ্ধি বৃত্তিক বিপ্লব--দুইটারই জন্ম হয়েছে ইউরোপীয় রেনেসার পরে, ইউরোপে।


মাঝখান দিয়ে এক হাজার বছর নষ্ট হয়ে গেল মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে। এই হাজার বছরে কোনো নতুন টেকনোলজি আবিষ্কার হয়নি, বিজ্ঞানে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। একাডেমির মত স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একের পর এক। বিপরীতে চার্চ , বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বেড়েছে প্রচুর। ''বিশ্বের সব জ্ঞান বাইবেলের মধ্যেই আছে, আর কোনো কিছুর দরকার নেই''--এই কনসেপ্টে চলেছিল ইউরোপিয়ানরা আলিফ লায়লার মত এক হাজার বছর ধরে।


২.


শুধু ইউরোপ না, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই একই অবস্থা ছিল ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে।


মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে খুব সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি ছিল। এই লাইব্রেরি গ্রীকরা নির্মান করেছিল ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে । কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে এই লাইব্রেরিতে হামলা হয়েছে, আবার লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে , আবার হামলা হয়েছে।


৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজারের মিশর আক্রমণের সময়, ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরেলিয়ান আক্রমণের সময়, ৩৯১ খ্রিষ্টাব্দে কপটিক পোপ থেওফিলাসের নির্দেশে আংশিকভাবে এই লাইব্রেরি ধংস করা হয়। ৬৪২ সালে , খলিফা ওমর (রা) এর বাহিনী একের পর এক এলাকা জয় করতে লাগল। ইজরাইল দখল করে তারা ধ্বংপ্রাপ্ত বায়তুল মুকাদ্দস পুনর্নির্মান করল। ইজরাইল পার হয়ে তারা আফ্রিকার মিশর ও দখল করল।


৬৪২ সালে তখনও মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে কিছু বই অবশিষ্ট ছিল। মিশরের নব নিযুক্ত গভর্নর ওমর ইবনে আব্দুল আস চিঠি লিখে খলিফার কাছে জানতে চাইলেন, বইগুলো নিয়ে কি করব ? উত্তর এলো--


"বইপত্রগুলো যদি কুরআনের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তবে সেগুলো আমাদের দৃষ্টিতে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। কাজেই এগুলোর ধ্বংস অনিবার্য। আর বইপত্রগুলোতে যদি কুরআনের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কথা থেকেও থাকে, তবে সেগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত। তাই বইগুলো ধ্বংস কর।"


ঘটনাটা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে একে ক্রুসেড ( ১০৯৬-১২৭১) এর সময়ে খৃষ্টান মৌলবাদীদের বানানো প্রপাগান্ডা বলে মনে করেন । তবে ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে বোঝা যায় ," একটিমাত্র বইয়ের মধ্যেই সব জ্ঞান নিহিত আছে, আর কোনো বই বা জ্ঞানের দরকার নেই"---এমন বিশ্বাস কাজ করেছিল তখন ।


সৌভাগ্যের বিষয় হল, আরব বিশ্বেও একটি রেনেসা এসেছিল। মার্টিন লুথার এর প্রটেস্টান্ট মতবাদের মতই আরবেও একটি মতবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল, যারা বলেছিল, কোরানের মধ্যে সব জ্ঞান নেই। আমাদের অন্যান্য বই ও পড়া উচিত। অন্য বিষয়ের জ্ঞান চর্চা করা উচিত।


এই গ্রুপটার নাম মুতাজিলা। আব্বাসিয় খেলাফত আমলে (৭৫০-১৫০০) এই মুতাজিলারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। অনেক খলিফা নিজেই ছিল মুতাজিলা অনুসারী। যেমন - খলিফা আল মামুন (৭৮৬-৮৩৩).


আব্বাসীয় খেলাফত আমলে জ্ঞান চর্চার এইরকম পরিবেশের কারনে মুসা আল খোয়ারিজমি (৭৮০-৮৫০), আল কিন্দি (৮০১-৮৭৩) হাসান ইবনে হাইসাম ওরফে আল হ্যাজেন (৯৬৫-১০৪০) ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭), ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১) আল তুসি (১২০১-১২৭৪) আল নাফিস (১২১৩-১২৮৮) এবং আরো অনেক বিজ্ঞানী এসেছিল তখন আরব বিশ্বে। আল হ্যাজেন বিশ্বের প্রথম ক্যামেরা আবিষ্কার করলেন। আল খোয়ারিজমি এ্যালজেব্রা তৈরি করলেন। ইবনে সিনা চিকিতসাবিদ্যায় বিপুল অগ্রগতি দেখালেন। গ্রীক বিজ্ঞানীদের বই গুলা আরবিতে এবং অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করে আরবরা জ্ঞান ছড়িয়ে দিলেন দিকে দিকে। মানব সভ্যতা এগিয়ে গেল আরো কয়েক ধাপ। এই সময়টাকে ইসলামিক গোল্ডেন এজ বলা হয়।


ওই সময়ে মুতাজিলাদেরকে নাস্তিক বা অমুসলিম বলা হলেও পরবর্তীতে তাদেরকে মুসলিম বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ইবনে সিনাকে একজন মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে বাংলাদেশের স্কুলে পড়ানো হয় এখন।


মুতাজিলা ছাড়াও সেই সময়ে আরো বেশ কয়েকটা দার্শনিক গ্রুপের জন্ম হয়েছিল।


"সবকিছু আল্লাহর হুকুমে ঘটে। তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না" -- এই কনসেপ্টের বিপরীতে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার কথা বলেছিলেন দরবেশ হাসান বসরি।


আল্লাহর 'ওহি' না পেলেও মানুষ নিজের 'আক্কেল' ( common sense) দিয়েই এক্সাক্ট নলেজ পেতে পারে এমন কথা বলেছিল আশারিয়া সম্প্রদায়।


১২৫০ সালে ইবনে তুফায়েল "হাই ইবনে ইয়াকজান" নামক একটা বই লিখেছিলেন, যে বইয়ের নায়ক জংগলে বসবাস করেছে সারাজীবন, মুগলি, বা টারজানের মত।জংগলের জানোয়ারের সাথেই বেড়ে উঠেছে। কিন্তু সে অন্য মানুষদের মতই সব কিছু জানে। অর্থাত 'ওহি' এবং 'আক্কেল' দুই উপায়েই জ্ঞান অর্জন সম্ভব। ( উল্লেখ্য - এই বইটার ইনস্পাইরেশনে রবিনসন ক্রুসো, এমিল,মুগলি,টারজান ইত্যাদি বইগুলো লেখা হয়েছে)


আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের পরে অন্য যে রাজবংশ গুলো আসে, তাদের ফিলসফি আলাদা ছিল। মুতাজিলা সম্প্রদায় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য ছাড়া মেইনস্ট্রিম মুসলিম অংশ থেকে আর তেমন বিজ্ঞানের চর্চা দেখা যায়নি কোথাও । এই কারনে পরবর্তী সময়ে মুসলিম বিজ্ঞানী আর খুজে পাওয়া যায়না।


তবে ইসলামিক গোল্ডেন এজে অনুবাদ করা বই পত্র ইউরোপে রেনেসায় অনেক কাজে লাগে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিরা খুব সহজেই গ্রীক স্থাপত্য এবং আরব জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে পেরেছিল মুসলিম দের মৌলিক এবং অনুবাদ করা বই থেকে।


৩.


ভারতবর্ষে প্রাচীন সময়ে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা কেমন হত, ধর্ম গুরুরা সেখানে বাধা দিতেন নাকি উৎসাহিত করতেন, সে বিষয়ে তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায়না।


তবে ভারতীয়দের মধ্যেও ''সবই বেদ/মহাভারত/রামায়নে আছে, আর কিছু পড়ার দরকার নেই''--এই ধারনা ছিল।


এ প্রসংগে বিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহা (১৮৯৩-১৯৫৬) মাসিক ভারতবর্ষ পত্রিকায় একবার লিখেছিলেন,


“… প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কী বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দিই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, ‘‘এ আর নতুন কী হইল, এ সমস্তই ব্যাদ-এ আছে।’’


আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, ‘‘মহাশয়, এ সব তত্ত্ব বেদের কোন অংশে আছে তাহা অনুগ্রহপূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?’’


তিনি বলিলেন, ‘‘আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই ‘ব্যাদে’ আছে।’’


বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্দু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিষ্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূল তত্ত্ব নিহিত আছে।............."


১৮০০-১৯৪১ পর্যন্ত সময়কালকে অনেকে বেংগল রেনেসা বলে থাকেন। এই সময়ে শিল্প সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রচুর অগ্রগতি হয়। জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭), আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪), ড. মেঘনাদ সাহা (১৮৯৩-১৯৫৬), সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪-১৯৭৪)র মত বিজ্ঞানী এই সময়ে এসেছিলেন বাংলায় ।


এই বেংগল রেনেসার সাথে ধর্মের ও একটা সম্পর্ক পাওয়া যায়। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-১৮৩১) তার স্বল্প জীবনেই বিশাল বিপ্লব করে ফেলেছিলেন। ১৭ বছর বয়সে কোলকাতার হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হয়েছিলেন তিনি । হিন্দু কলেজের ছাত্রদের নিয়ে ''ইয়ং বেংগল মুভমেন্ট'' শুরু করেছিলেন। এরা সমাজের প্রচলিত ধ্যান ধারনা কুসংস্কার ভাংগার আন্দোলন করত। গরুর মাংস খাওয়া সহ বিভিন্ন "সমাজবিরোধী" কাজ তারা উৎসবের মত করে পালন করত। অনেকে হিন্দু ধর্ম ও ত্যাগ করেছিলেন তখন । প্যারিচাদ মিত্র, মদনমোহন তর্কালংকার, রাধানাথ শিকদার ইভেন মাইকেল মধুসূদনের মত মনীষী এই ইয়ং বেংগল থেকে এসেছেন।


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) প্রাচীন কিছু ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছিলেন তখন বেদান্ত সূত্র বাংলায় অনুবাদ করার মাধ্যমে। মানুষ জানতে পারল, বেদ এর মধ্যে আসলে কি আছে। বিধবা বিবাহ প্রচলন করলেন তিনি, যেটা গোড়া ধার্মিকদের জন্য একটা বড় আঘাত ছিল ।


কাছাকাছি সময়ে রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) এর ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলন ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার পথ সুগম করেছিল। বাহ্ম সমাজ প্রচুর বই পড়তে উতসাহ দিত তখন। বাংলায় কোরান অনুদিত হয়েছিল ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য গিরীষ চন্দ্র সেনের দ্বারা। ইউরোপিয়ান দার্শনিকদের রচনাও এরা তখন অনুবাদ করেছিলেন।


মোট কথা, এই সময়কার মনীষীরা ''সবকিছু বেদে আছে'' না বলে, জ্ঞানের অন্যান্য উতস ও ঘাটাঘাটি শুরু করেছিলেন। রাজা রামমোহন রায় নিজেই লেখাপড়ার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিলেন কুসংস্কার ভেংগে । এর আগে পর্যন্ত কুসংস্কার প্রচলিত ছিল, সাগর পাড়ি দিলে নাকি জাত যাবে ।


৪.


সাম্প্রতিক কালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ইন্টারেস্টিং বিতর্ক চোখে পড়ছে।


নিউটন নাকি ইবনে সিনার ফিজিক্সের সূত্র চুরি করেছিলেন । পক্ষে বিপক্ষে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। ইবনে সিনার পান্ডুলিপিতে কি লেখা ছিল, নিউটন পান্ডুলিপি কোথায় খুজে পেলেন, কত পার্সেন্ট কপি করেছেন সেখান থেকে, গ্যালিলিও , টলেমি, জোহানস কেপলার দের কাছ থেকে নিউটন কত টুকু কপি করেছেন, কাদেরকে ক্রেডিট দিয়েছেন আর কাদেরকে দেননি সেসব জটিল আলোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ।


এসব আলোচনায় না গিয়ে, আসুন ,কিছু কমনসেন্স কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।


এক জেনারেশনের বিজ্ঞানীর গবেষনার সাহায্য নিয়েই পরবর্তী জেনারেশন এগিয়ে যায়। সক্রেটিস এর শিষ্য প্লেটো, তার শিষ্য এরিস্টেটল--এভাবেই গুরু শিষ্য পরম্পরা এগিয়ে যায়।


নিলস বোর, রাদারফর্ড, স্রডিংগার, ওপেনহাইমার ,ম্যাক্স প্লাংক, হাইজেনবার্গ, এনরিকো ফার্মি, পল ডিরাক --আধুনিক পরমানুবাদের যারা ডেভেলপমেন্টে ছিলেন, সবাই জার্মানির গোয়েটিংগেন ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন সময়ে পড়েছেন। এদের পরস্পরের মধ্যে ভালভাবেই যোগাযোগ ছিল। একদম গুরু শিষ্য পর্যায়েরই।


আমরাও ডেমোক্রিটাস,আর্কিমিডিস, গ্যালিলিও, লিওয়েন হুক, ডাল্টন, এভোগেড্রো,রাসেল ওয়ালেস, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিং সবার আবিষ্কার পড়েই তারপর নিজের কাজ শুরু করি (যদি নিজেদের নতুন গবেষনা শুরু করি আরকি)। তবে সবক্ষেত্রেই পুরনো গবেষকদের রেফারেন্স লিংক, কার্টেসি দেই।


নিউটন গবেষক হিসেবে খুবই ভাল হলেও, নৈতিকতার দিক দিয়ে অত ভাল লোক ছিলেন না। লিবনিজ কে ক্যালকুলাস এর আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে ফেক আইডি দিয়ে পত্রিকায় গালাগালি মুলক প্রবন্ধ লিখতেন।


সুতরাং নিউটনের পক্ষে মুসলিম বিজ্ঞানীর রচনা থেকে ডাইরেক্ট কপি পেস্ট করা, এবং কার্টেসি স্বীকার না করা একেবারে অসম্ভব না।


তবে গতিবিদ্যা সম্পর্কিত সূত্রাবলীর কথা যদি বলেন, সেক্ষেত্রে এই গতিবিদ্যা নিয়ে সমসাময়িক অনেকেই কিন্তু কাজ করছিলেন। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি হেলিকপ্টারের পাখা ডিজাইন পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন। দেকার্তে, গ্যালিলিও, কেপলার সহ অনেকেই বস্তুকনাদের গতি বা আচরন সম্পর্কে ধারনা রাখতেন। নিউটন সব অবজার্ভেশন গুলোকে ম্যাথমেটিকালি রিপ্রেজেন্ট করেছিলেন । F= ma, F1=-F2 বা m1u1+m2u2= m1v1+m2v2 এইরকম নিখুত সূত্র এর আগে কেউ জানাননি।


৫.


( যারা গণিতে দুর্বল,তারা এই অংশটা এভয়েড করতে পারেন)


ম্যাথে নিউমেরিকাল এনালাইসিস নামে একটা সিস্টেম আছে। বীজগনিত দিয়ে বা জ্যামিতি দিয়ে সমাধান না করে নিউমেরিকাল এনালাইসিস দিয়ে সমাধান করেও সমীকরনের অজানা ভ্যারিয়েবলের মান বের করা যায়।


যেমন ধরুন, x2-5x+6=0 সমীকরনটা মিডল টার্ম ব্রেক করে x এর মান বের করতে পারেন। ভ্যালু আসবে ২ আর ৩। (বীজগাণিতিক পদ্ধতি অনুসারে )


আবার এটাকে গ্রাফে প্লট করে দেখতে পারেন । y অক্ষকে 2 আর 3 এ ছেদ করবে। তাই ভ্যালু হচ্ছে ২ আর ৩।


মাঝে মাঝে সমীকরনে আন নোন ভেরিয়েবল বেশি থাকলে এই সব পদ্ধতিতে কুলায় না। নিউমেরিকাল এনালাইসিস তখন খুব কার্যকরী।


এই সমীকরণটাই নিউমেরিকাল এনালাইসিসে সল্ভ করার চেষ্টা করি ।


মনে করি, এই সমিকরনে x এর ভ্যালু কিছু একটা ধরলাম। আন্দাজে। ১০,২০,৩০ , কিংবা মাইনাস এক হাজার, যা খুশি। আমার পছন্দের সংখ্যা ,৬৬৬ ধরলাম আপাতত। ইলুমিনাতি নাম্বার।


পরের স্টেপে এই ৬৬৬ কেই x এর জায়গায় বসিয়ে x এর মান বের করার চেষ্টা করি।


x2-5x+6=0 কে লিখতে পারি x= square root of 5x-6


কিংবা উভয় পক্ষকে x দ্বারা ভাগ করলে পাব , x= 5-6/x


এইবার x এর মান বসালে x এর নতুন ভ্যালু পাব। আগেরটাকে xi আর পরেরটাকে xii


এভাবে প্রতি স্টেপে x এর নতুন নতুন ভ্যালু বসাতে থাকুন। দেখবেন ৬৬৬ থেকে এক্স এর ভ্যালু কমে কমে ৩ বা ২ এর কাছাকাছি চলে আসছে।


যেমন দ্বিতীয় স্টেপেই ৬৬৬ থেকে এক্স এর ভ্যালু কমে গিয়ে আসে ৪.৯৯ ,তার পরের স্টেপে ৩.৭৯, তার পরের স্টেপে ৩.৪২ । এভাবে কমতে কমতে একদম ৩ এর কাছাকাছি চলে আসে। ৩.০০০০০০০০০০০০০০০১ কে কি আপনি ৩ ধরবেন ? নাকি আরো এ্যাকুরেট রেজাল্ট খুজবেন ? মোট কথা ,একুরেসির শেষ নেই। ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯& এ্যাকুরেসি থেকেও কিন্তু আরো ইমপ্রুভ করা যায়।


নিচের ছবিতে স্টেপগুলা অংক করে করে দেখানো হয়েছে


আপনি অন্য কোনো নাম্বার দিয়েও শুরু করতে পারেন। ঘুরেফিরে ২ বা ৩ ই আসবে ,বেশ কয়েকটা স্টেপ পরে।


শুধু ম্যাথের সমস্যা না। অন্য যে কোনো সমসায় এইভাবে সল্ভ করতে পারেন। যত বেশি আইটেরেশন করবেন, ততবার একটু একটু করে নিজের রেজাল্ট কারেক্ট করে নিবেন। তত বেশি একুরেসির কাছাকাছি যেতে পারবেন।


৬.


ডেমোক্রিটাস পরমানু সম্পর্কে যে কথা বলেছেন, সেটা ধরুন ৫০% কারেক্ট। এরপরে ডাল্টন এসে যা বলেছেন, সেটা ৭০% কারেক্ট। রাদারফোর্ড এসে সৌরকেন্দ্রিক যে মডেল দিয়েছেন সেটা ৮৫% কারেক্ট। নিলস বোর সেই মডেল ইমপ্রুভ করে যে মডেলে দিয়েছেন সেটা ধরুন ৯৫% কারেক্ট। এইভাবে আস্তে আস্তে পরমানুর নিখুত অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। কিন্তু আগের বিজ্ঞানীদেরকে ডাইরেক্টলি ভুল বলা যায় না । তাদের মডেলের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, পরবর্তী বিজ্ঞানীরা সেটা ঠিক করে দিয়েছেন।


ইবনে সিনা বলেছিলেন, উটের প্রস্রাবের মধ্যে অনেক রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে। তিনি উটের প্রস্রাব খেতে উপদেশ দিয়েছিলেন। এখন তার বক্তব্যের সীমাবদ্ধতা পাওয়া গেছে। WHO বলছে, উটের প্রস্রাব খেলে MERS রোগ হতে পারে। তাই উটের প্রস্রাব বাদ।


নিউটন লোহার সাথে তুতে মিশিয়ে লোহাকে তামায় রুপান্তরিত করতে পেরেছিলেন।


(Fe+CusO4= Cu+FesO4)


তিনি ভেবেছিলেন, এইভাবে কিছু একটা মিশিয়ে লোহাকে সোনা বানানো যাবে। এই কারনে তিনি দীর্ঘদিন লোহাকে সোনা বানানোর বিদ্যা ( আলকেমি বিদ্যা)র পেছনে দৌড়েছেন। এখন আমরা তার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরেছি। সোনা খুবই নিষ্ক্রিয় যৌগ। CuSO4 এর মত AuSO4 জাতীয় কোনো যৌগ নেই । এই কারনে লোহার সাথে কোনো কিছু মিশালে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় সোনা মুক্ত হবেনা।


এছাড়া, ধাতুর সক্রিয়তা সিরিজে সোনা একদম নিচে। সো, এইভাবে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় সোনা নিষ্কাষণ সম্ভব নয়।নিউটন হুদাই আলকেমির পিছনে সময় নষ্ট করেছিলেন।


যত সময় যাবে, প্রাচীণ বিজ্ঞানীদের কথার সীমাবদ্ধতা বেশি করে চোখে পড়বে। সবকিছু নির্দিষ্ট বইতে আছে--এই ধারনা যেমন ভুল, তেমনি ডারউইন, স্টিফেন হকিং বা নির্দিষ্ট কোনো বিজ্ঞানীর সব কথা ঠিক--এমন ধারনাও ভুল।


এবং এই বিজ্ঞানীরা নিজেরাও কখনো দাবি করেন না, যে, "আমি 'আখেরি বিজ্ঞানী' আমার পরে আর কোনো বিজ্ঞানী আসবে না। ফিযিক্সে যা যা জ্ঞান আছে, সব কিছু আমিই বলে যাচ্ছি। আর কোনো আপডেটের দরকার নেই। এটাই চূড়ান্ত জ্ঞান। "


বরং এই বিজ্ঞানীরা কিছুদিন পরেই দেখেন, তাদের আবিষ্কার বা তাদের থিওরিগুলা জুনিয়র রা এসে আপডেট করতেছে।


আইনস্টাইন হিসাব করেছিলেন, মহাবিশ্ব স্থির। তার জীবদ্দশাতেই এডুইন হাবল দূরবীন দিয়ে দেখলেন,মহাবিশ্ব ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। আইনস্টাইন এর তথ্যগুলা আপডেটেড হল।


ডারউইন বলেছিলেন, মানব শরীরের প্রতিটা ছোট ছোট অংশই ( Gennule) ভ্রূনের মধ্যে যায়, এবং নতুন সন্তানের শরীরে ঢুকে যায় সেই অংশটা। পরবর্তীতে জেনেটিক্স এর উন্নতির পর আমরা আপডেটেড তথ্য পেলাম। জানা গেল, শরীরের ছোট ছোট অংশ দরকার নেই। জিনের মধ্যেই সব তথ্য থাকে।


ল্যামার্ক বলেছিলেন, এক প্রজাতির অভিজ্ঞতা পরের প্রজাতিতে চলে যায়। জিরাফ গলা লম্বা করে গাছের পাতা খেলে তার বাচ্চারাও লম্বা গলা নিয়ে জন্মাবে। পরবর্তীতে আপডেটেড তথ্য জানা গেল, না, এইভাবে বাচ্চা কাচ্চার কাছে ইনফরমেশন পৌছায় না। কোনো জিন পুলের মধ্যে সবচেয়ে পাওয়ারফুল জিন রা রাজত্ব করবে। লম্বা গাছ ওয়ালা জংগলে লম্বা গলার জিরাফরাই টিকে থাকবে। ছোট গলা ওয়ালা রা মরে যাবে।


নিউটন বলেছিলেন, আলো 'ইথার' নামক এক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যায় বলত একসময় বিজ্ঞানীরা। মাইকেলসন এবং মর্লি প্রমাণ করে দিলেন, ইথার নামে কিছু নেই।


এইসকল ক্ষেত্রে, জুনিয়রদের বা শিষ্যের কাছে হেরে যাওয়ায় দুঃখের বা অপমানের কিছু নেই। বরং সেটা গৌরবের। নিজের শিষ্যের কাছে হেরে যেতে একজন গুরু সব সময়ই গর্ব বোধ করবে।


প্রতিমুহুর্তে আমরা আপডেটেড হচ্ছি। আইফোন সিক্স এর চেয়ে আইফোন সেভেন ভাল। তার চেয়ে আইফোন এইট ভাল। আমি বলব না, যে আইফোন সেভেন খারাপ, বা কাজ করবে না। কিন্তু আপনি যখন নতুন মোবাইল কিনতে চাইবেন, নিশ্চয়ই লেটেস্ট মডেলটাই কিনবেন । শাওমি এম আই টেন না কিনে আপনি নিশ্চয়ই শাওমি এম আই টেন প্রো কিনতে চাইবেন!


একইভাবে ,জ্ঞানের ক্ষেত্রেও ,আগের বিজ্ঞানী কি বলেছিলেন সেটা ফলো না করে লেটেস্ট বিজ্ঞান কি বলছে, সেটা ফলো করাই কি বেশি যুক্তিযুক্ত নয়? অতীতে কোনো এক পল্লী চিকিতসক হয়তো গরুর প্রস্রাবের মধ্যে কোনো একটা উপকার পেয়েছিলেন, হাতের কাছে আর কোনো ওষুধ না পেয়ে সেটাকেই সর্ব রোগের মহৌষধ বানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে তো কেটে গেছে অনেক বছর। আমরা আপডেটেড হয়েছি অনেক বেশি। এখন করোনার জন্য নতুন ওষুধ না বানিয়ে " গরুর প্রস্রাব খেলেই সব সেরে যাবে" বিশ্বাস নিয়ে যদি বসে থাকি, সেটা কেমন হয়!!!


আমরা এখন যা যা আবিষ্কার করছি, আমাদের নেক্সট জেনারেশন সেটা ইমপ্রুভ করবে। এইভাবেই জ্ঞানের সিলসিলা চালু থাকবে।


গ্রীক-রোমান বিজ্ঞানীরা যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন, সেই মশাল ক্যারি করেছেন আরবের বিজ্ঞানীরা। পরবর্তীতে , রিলে রেসের মত করে, সেই জ্ঞানের শিখা বহন করেছেন ইউরোপিয়ান বিজ্ঞানীরা । পূর্ববর্তী বিজ্ঞানী কোন দেশের, কোন ধর্মের, নারী-পুরুষ,সাদা -কালো, সিনিয়র-জুনিয়র --কিছুই দেখেননি তারা । জাস্ট তারা গবেষনা কর্মকে গুরুত্ব দিয়েছেন।


আর এখন পুরা বিশ্ববাসীর হাতেই সেই মশালের দায়িত্ব। বর্তমানে গ্লোবাল ভিজেলের যুগে সবাই সব তথ্য পাচ্ছি, সবার সামনেই সমান সুযোগ। জ্ঞান এখন বিশ্বের সব জায়গায় একসাথেই অগ্রসর হচ্ছে।


নিশ্চিতভাবেই , আমাদের আগের জেনারেশন যেখানে শেষ করেছে , আমরা সেই জায়গা থেকে শুরু করে মানব সভ্যতাকে আরো একটু এগিয়ে নিয়ে যাব। আমাদের পরের জেনারেশন এগিয়ে দেবে আরেকটু। রিলে রেসের ব্যাটন হাত বদল হতে থাকবে, কিন্তু এ রেস চলবেই।


৭.


বর্তমান সময়েও অনেকেই আপডেটেড তথ্য না নিয়ে ব্যাকডেটেড টেকনোলজি নিয়ে থাকতে চায়। সব কিছুই নির্দিষ্ট একটা বইয়ের মধ্যে আছে--এই কনসেপ্ট থেকে অনেকেই বের হতে পারছেন না।


প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ওলামা লীগ জানাচ্ছে, করোনাভাইরাস কোনো ছোয়াচে রোগ নয়, কারন হাদিসে বলা আছে, ছোয়াচে রোগ নামে কিছু নাই । সুতরাং WHO বা অন্য সবাই মিথ্যা বলছে।


ডোনাল্ট ট্রাম্প বলতেছে , বাইবেলে বলা আছে, নূহের প্লাবনের মত আর প্লাবন পৃথিবীতে আসবে না। সুতরাং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে পৃথিবীতে পানি বাড়বে না কখনোই। গড হ্যজ প্রমিজড। যারা যারা বলছে - সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে, তারা মিথ্যা বলছে, তারা চীনের দালাল।


বিজ্ঞানের অগ্রগতি এদের কারনেই হুমকির মুখে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্লাইমেট নিয়ে নিয়ে গবেষনার জন্য ফান্ডিং বন্ধ করে দিচ্ছে, স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা আইন করে নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে ।


ট্রাম্প এর মত আরো কয়েকটা পাগলা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে যায়, বা এই মেন্টালিটির মানুষ যদি শাসন ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তার করে, তাহলে বিশ্বের ভবিষ্যত অন্ধকার। নতুন জ্ঞানের চর্চা আর হবে না তখন। পুরা বিশ্বই তখন মধ্যযুগের ইউরোপের মত অন্ধকার যুগে চলে যাবে।


ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়েই দেখা যায়,কোনো জাতি যখনই Continuous Development এর বদলে নির্দিষ্ট কিছু বই পত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে,তখনই সমাজ- সভ্যতা-জ্ঞান চর্চা থেমে যায়। বর্তমান সময়েও আমাদের সচেতন থাকতে হবে, আমরা রিসার্চ এন্ড ডেভেলেপমেন্ট বাদ দিয়ে ফিক্সড এক বা একাধিক বইকেই যেন জ্ঞানের সকল উতস হিসেবে মনে না করি।