PK

Life 2

 প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার উৎপত্তি

[ রাসায়নিক পর্যালোচনা ]


প্রাণের উৎপত্তির মূল উপাদান হিশেবে যা' আছে সেটা খুবই নিষ্প্রাণ কিছু রাসায়নিক পদার্থ।

জীবনের ভিত্তি তৈরি হয় মাত্র চারটি সাধারণ মৌলিক পদার্থ ব'লেঃ কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O) এবং নাইট্রোজেন (N); সংক্ষেপে ব'লে CHON ( খন )। সালফার (S) এবং ফসফরাস (P) আনলে মূল উপাদান দাঁড়ায় ছয়টি তে – CHON(SP)। [ 1 ]


প্রকৃতিতে খন প্রচুর

পরিমাণে থাকাই প্রাণ সৃষ্টির একমাত্র কারণ নয়, বরঞ্চ পাশাপাশি এরা অপরের সাথে মিলে নানাধরণের যৌগ উৎপন্ন করছে। যেমন – মিথেন (CH4), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), অ্যামোনিয়া (NH3) প্রভৃতি। এ-যৌগগুলো যেহেতু পানিতে সহজেই দ্রবীভূত হয়, এগুলো জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


জীব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতরে এই "জলীয় তথ্য" কোষের মধ্যে বহন করছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া ( বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ) থেকে ছত্রাক ( বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক ), ছত্রাক থেকে কোলা ব্যাঙ ( Hoplobatrachus tigerinus ), কোলা ব্যাঙ থেকে তিমি মাছ (Balaenoptera Musculus ) কিংবা তিমি মাছ থেকে মানুষ ( Homo sapiens ) – পৃথিবীতে প্রাণের যে বিস্তৃত পরিসর হতবিহ্বল ক'রে, সেটা সরল পর্যায়ে আসে প্রাণের উৎসমুখে।


CHON(SP)(খন'ই) হলো "জীবন গঠন" এর শুরুর ধাপ। পরে তৈরি হয় পরবর্তী ধাপগুলো – অ্যামাইনো এসিড (জৈব এসিডে NH2 এবং COOH), চিনি, ডিএনএ, আরএনএ কিংবা অন্যান্য মনোমার।


এগুলো কোনোটিই নিজের আলাদাভাবে কোনো এক "জীবন" নয়। উদাহরণ সাপেক্ষে বিষয়টিকে অনেকটা আমাদের মস্তিষ্কের "চিন্তাশক্তি" অথবা সচেতনতার সাথে তুলনা ক'রা যায়। আলাদা-আলাদাভাবে মাথার মধ্যকার লাখ-লাখ নিউরনগুলোর কোনোটিই এককভাবে চিন্তা ক'রতে পারে না, কিন্তু এই "নির্বোধ" নিউরনগুলোই সম্মিলিতভাবে একধরনের অভিব্যক্তির জন্ম দেয় যাকে আমরা বলি কনশাসনেস বা চেতনা। প্রাণও অনেকটা এরকম – নিষ্প্রাণদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা সম্মিলিত সজীব অভিব্যক্তি। [ 2 ]


কিছু প্রোটিনের সমন্বয়ই প্রাণ নয়, প্রাণ হচ্ছে "কাজের সুনির্দিষ্ট অভিব্যক্তি"।

জীবিত বস্তু ততক্ষণ জীবিত যতক্ষণ এর ভেতরে রাসায়নিক প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে।

জে. বি. এস. হলডেনের ভাষায়,

'Any self-perpetuating pattern of chemical reaction, might be called alive.'


নিউক্লিয়াস ( Nucleus ) ও সাইটোপ্লাজম ( Cytoplasm ) – কোষই পারে নতুন জীবনের জন্ম দিতে। কোষই জীবনের ক্ষুদ্রতম আধার। কোষকে জীবনের ক্ষুদ্রতম আধার হিশেবে বললে, ভাইরাসবাদীরা হয়তো আপত্তি তুলবেন। বলতে পারেন, "নিউক্লিয়িক এসিড" নিয়ে "বেঁচে থাকা" ভাইরাসরা জীবিত। কিন্তু ভুলে গেলে হ'বে না, ভাইরাসের "বেঁচে থাকা" সম্ভব হয় যখন সে হাতের কাছে ভর করার মতোন "জীবিত" কোষের সাইটোপ্লাজম ( Cytoplasm ) পায়।


১৮৫৮ সালে ডব্লিউ. কিটোনের কোষ মতবাদ থেকে জীবিত বস্তুর সংজ্ঞা দেওয়া যায়।

সায়েন্টিস্ট উইলিয়াম কিটোনের Biological science – এর সংজ্ঞাটি হলোঃ

Living things are chemical organizations compared of cells and capable of reproducing themselves ( 'জীবিত বস্তু কোষ নির্মিত রাসায়নিক পদার্থ যা পুনরুৎপত্তির ক্ষমতা রাখে'। ) সংজ্ঞানুসারে জীবিত বস্তুর দু'টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়ঃ

১/ এটি হ'তে হ'বে কোষ নির্মিত।

২/ তার পুনরুৎপত্তির ক্ষমতা থাকবে ( অর্থাৎ কোষ থেকে কোষ উৎপন্ন হ'বে )


ভাইরাসবাদীদের মতোন জীবনকে মানলে জীবনের ডেফিনিশন হ'বে বড় পরিসরে।


বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানী জে. ডি. বার্নাল ( ১৯৫১ ) জীবনের সংজ্ঞায়ন করেনঃ

'একটি নির্দিষ্ট আয়তন বা স্থানের মধ্যে স্ব-চালিত রাসায়নিক প্রক্রিয়ার নাম জীবন'। তিনি বললেন- 'জীবন হচ্ছে এক অতি জটিল ভৌত রাসায়নিকতন্ত্র যা একগাদা সুসংহত বা একীভূত ও স্ব-নিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ও ভৌত বিক্রিয়ার মাধ্যমে তার পরিপার্শ্বের বস্তু ও শক্তিকে স্বীয় বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার ক'রে।'

গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের পর থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্যকে জীবনের পরিচয়জ্ঞাপক বৈশিষ্ট্য ব'লেঃ

১/ নিজের প্রতিলিপি তৈরি করা।

২/ মিউটেশন ঘটানোর ক্ষমতা এবং

৩/ ডারউইনীয় সিস্টেমে বিবর্তন।


জীবনের শুরু ঘটে জীবন থেকেই, জীবন তৈরি ক'রে পরবর্তী প্রজন্মকে; কিন্তু ধারণা ক'রা হয় 'প্রথম জীবন' জন্ম নিয়েছিলো অজৈব পদার্থ থেকে। জীব তার ডিএনএ কিংবা আরএনএ থেকেই প্রজনন বিষয়টি পেয়ে থাকে।


ডারউইন ব'লেছিলেন– 'বর্তমানকালে জীবনের উৎপত্তি নিয়ে ভাববার মতোন বাজে কাজ আর কিছুই নেই, তার চেয়ে বরঞ্চ বস্তুর উৎপত্তি নিয়ে ভাবা যেতে পারে' ( It is mere rubbish thinking at present of the origin of life ; one might as well think about the origin of matter )।


জে. ডি. বার্নালের ১৯৬৭ সালের উক্তিটি স্মর্তব্যঃ

Life is beginning to cease to be a mystery and becoming practically a cryptogram, a puzzle, a code that can be broken, a working model that sooner or later can be made